raabtabd.com

তামিম রায়হান

ফজর নামাজের বেশ খানিকটা আগে বিছানা ছেড়ে ওঠলাম। রাতেই সবকিছু গোছানো ছিলো। তবুও সতর্কতার খাতিরে একবার ভালো করে দেখে নিলাম। তেমন কিছু অবশ্য নেয়ার নেই, একদিনের সলো ট্রিপে আর কিইবা নেবো! দুপুরের লাঞ্চ প্যাক, এক সেট অতিরিক্ত কাপড়, পাওয়ার ব্যাংক, চার্জারসহ টুকিটাকি প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। সাথে নিয়েছি সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে আর মির্জা গালিবের গুল-এ-নগমা, আমার ধারণা পাহাড়ে বসে গালিব পড়ার মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি আছে। বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে গেলাম, অন্যদিনের তুলনায় বেশ ঠান্ডা পড়েছে আজ। হাতে থাকা স্মার্ট ওয়াচ বলছে আজকের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মসজিদে যেতে যেতে জামাআতের সময় হয়ে এলো। ফজরের মসজিদ মুসল্লী সঙ্কটে ভোগে, এ সঙ্কটটা দেশবিভূঁইয়ে একই। ইমাম সাহেবসহ মুসল্লি মাত্র হাতে গোণা কয়েকজন। নামাজান্তে  ইমাম সাহেবের চায়ের নিমন্ত্রণ, না করতে পারলাম না— ভদ্রলোক চা খুব দারুণ বানান। যাত্রাপূর্বে এক কাপ চা মন্দ না!

৭.৩০ স্টেশনে উপস্থিত হয়ে গেলাম, ট্রেন ছাড়তে তখনও প্রায় ১৫ মিনিট বাকি । যথাসময়ে চলতে শুরু করলো ট্রেন। গন্তব্য পার্শ্ববর্তী ছোট্ট সুন্দর শহর বোলোনিয়া। ইতালির অন্যতম জনবহুল শহর এটি। ১৯শ শতকে ইতালীয় এককীকরণের পর থেকে বোলোনিয়া শহরটি দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে। মুজতবা আলীর দেশে-বিদেশে খুলে বসলাম, কিছুক্ষন বাদেই বরাবর দিকের সিটে এক ভদ্রলোক এসে বসলেন। আমার দিকে তাকাতে নিজ থেকে তার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। ভদ্রলোক খাঁটি নাপোলিতান। নাপোলিতান পিৎজা বিশ্বজুড়ে বেশ বিখ্যাত। কিন্তু ওই অঞ্চলের ভাষা বেশ দুর্বোধ্য; অন্তত আমার তাই মনে হয়। কথায় কথায় জানতে পারলাম পেশায় তিনি একজন ওয়াচ ম্যাকানিক। ঘড়ির কলকব্জা তাঁকে মুগ্ধ করে রেখেছে গত পঁচিশ বছর ধরে। অবশ্য ঘড়ির সাথে যে তার বিশেষ সখ্যতা আছে, আগেই সেটা টের পেয়েছিলাম হাতে থাকা Patek Philippe Grandmaster Chime এর হুবহু মাস্টার কপি দেখে। কপি বলার কারণ, সেই ঘড়ি  কোম্পানী এক পিসই বানিয়েছিলো, বর্তমানে তা কোনো এক কালেক্টরের বিশেষ সংগ্রহে আছে। উনি আমার হাতে থাকা বইটার প্রতি খুব আকৃষ্ট হলেন, তাকে মুজতবা আলী আর দেশে-বিদেশে নিয়ে বিস্তারিত বললাম। মনে হলো বেশ সন্তষ্ট উনি। জানতে চাইলেন কোথায় যাচ্ছি? বোলোনিয়া যাচ্ছি শুনে বেশ খুশি হলেন। ব্যবসার কাজে প্রায়ই নাকি যেতে ওদিকে, বেশ কিছু উপকারী টিপসও শেয়ার করলেন। ইতোমধ্যেই ট্রেন পরবর্তী একটা স্টেশনে এসে থামলো। ভদ্রলোক আমাকে বিদায় জানিয়ে নেমে গেলেন। ট্রেন চলতে শুরু করলো আবার। বইয়ে আর মনোযোগ দিতে পারলাম না। বাইরে তাকিয়ে সবুজের সমারোহ দেখলাম, সূর্য ততক্ষণে নিজের অস্তিত্ব বেশ জোরেশোরে জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। একটা ঢালু পাহাড়ের পাশ দিয়ে ট্রেন দ্রুত চলে যাচ্ছে, বাতাসও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেছে, যেন প্রকৃতি ও প্রযুক্তির মধ্যে শক্তিমত্তার প্রতিযোগিতা চলছে। পাহাড়ের কোলজুড়ে নানান ফলমূল আর সবজির চাষ করে রেখেছেন পাহাড়ী কৃষকরা। কয়েকটা গাছ দেখলাম ফলভারে একেবারে মাটি ছুঁইছুঁই অবস্থা! নয়নাভিরাম প্রকৃতি দেখতে দেখতে কখন যে চোখের পাতা এক হয়ে গিয়েছিলো টের ই পাইনি। চোখ যখন মেলে ধরলাম ঘড়িতে তখন ০৮.১৫, মানে আমার নির্দিষ্ট স্টেশন আসতে আরও মিনিট পনেরো বাকি। আশেপাশের স্টাফদেরর ঘোরাঘুরি করতে দেখে, একটা ক্যাপাচিনো অর্ডার করলাম। সাধারণত কফিতে আমার বিশেষ আগ্রহ নেই, তবে মাঝেমধ্যে চেখে দেখি আরকি। খুব স্বাভাবিকভাবেই, সাধারন মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা গুণতে হলো সেই কফির জন্য। একদিক থেকে শান্তিও পেলাম, অন্তত কোনোভাবে হলেও আমরা বাঙালীরা ইউরোপিয়ানদের সঙ্গে এক কাতারে আছি! বিষয়টা মজাচ্ছলে আনন্দের।

***

স্টেশন থেকে বের হয়েই পাশের একটা ট্যাবাকো স্টোরে ঢুকলাম শহরের একটা মানচিত্র নেয়ার জন্য। মূলত গত কয়েকদিন ইন্টারনেটে বেশ ঘাটাঘাটি করেছি বোলোনিয়া নিয়ে। এখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান, খাবার-দাবারসহ মোটামুটি সবকিছু সম্পর্কে একটা ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর এ জন্যই কোনো ট্রাভেল এজেন্ট বুক করিনি। নিজে নিজে খুঁজে বের করার মাঝে একটা অ্যাডভেঞ্চারাস ব্যাপার আছে। সবকিছুতে অ্যাডভেঞ্চার খোঁজার এই নেশা কিশোর বয়সে রকিব হাসান আমাদের মাথায় ঢুকিয়েছিলেন “তিন গোয়েন্দা”র মাধ্যমে।  এতে অবশ্য হীতে বিপরীতও হয় অনেক সময়। দেশে থাকাকালীন সেবার বান্দরবান ট্রিপে বন্ধুরা মিলে এমনই এক অ্যাডভেঞ্চারের পরিকল্পনা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত দেখা গেলো সন্ধ্যা বেলা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি যেখানে না আছে কোনো খাবারের দোকান আর না তো কোনো থাকার বন্দোবস্ত! বাধ্য হয়ে এক স্থানীয় ভদ্রলোকের বাড়িতে আশ্রয় নিই সেই রাতে।

তবে শহরজুড়ে ফ্রি ওয়াই-ফাই অফার করা কোনো স্থানে তেমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখিন হবো না—  এই বিশ্বাসে ম্যাপ হাতে হাঁটা শুরু করলাম। প্রথম গন্তব্য বোলোনিয়ার প্রসিদ্ধ due torri বা টু টাওয়ার্স । যা স্টেশন থেকে সামান্য কিছুটা দূরে শহরের একেবারে মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। ১১০৯ থেকে ১১২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে উঠে টাওয়ার দুটি। সেসময় ক্ষমতাসীন পরিবারগুলো নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে শহরজুড়ে উঁচু উঁচু টাওয়ার তৈরী করতো। কালের বিবর্তনে অন্যসবগুলো ধ্বসে পড়লেও, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আসিনেল্লি ও গারিসেন্দা টাওয়ার। প্রায় ৯৭ মিটার লম্বা আসিনেল্লি টাওয়ার বহু দূর থেকে দৃষ্টিগোচরে আসে, যেনো সারাজীবনে কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে অন্তিম মূহুর্ত পর্যন্ত এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার প্রতিজ্ঞা করেছে কোনো বিরাট আকৃতির দানব।

অপরদিকে গারিসেন্দা টাওয়ার তুলনামূলক ছোট ও ডানদিকে হেলে গিয়েছে এবং যেকোনো সময় ধ্বসে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ সতর্কতার সাথে ঐতিহাসিক এই স্থাপনা দুটি রক্ষা করার চেষ্টা করছে।

দর্শনার্থীদের জন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সুযোগ থাকলেও আজকে সংস্কারজনিত কাজের জন্য তা বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ৪৯৭ ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে সুউচ্চতা থেকে শহর দেখার সুযোগ হাতছাড়া হলো। তাই ব্যর্থ মনোরথে ফিরলাম Sala Borsar দিকে।

এখন গন্তব্য sala borsa, যেটি মূলত একটি পৌরসভা অফিস ছিলো। পরবর্তীতে নব্বই দশকের শেষের দিকে এটিকে আধুনিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বৃহৎ পাবলিক লাইব্রেরীতে রূপ দেওয়া হয়। অনেক আগে সিলেটে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার কোনো এক পাবলিক লাইব্রেরীতে প্রবেশ করে আমি অবাক হয়েছিলাম, বিশাল বড় ছিলো সেটি। যতদূর চোখ যায় শুধু বই আর বই, কোনটা রেখে কোনটা হাতে নিবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আজ তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি অবাক হলাম। এটাকে শুধুই লাইব্রেরী বললে ভুল হবে, বিশাল লাইব্রেরী, অডিটোরিয়াম, ল্যাবরেটরিসহ ভেতরে নানান আয়োজন। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম ভেতরটা, নিচ তলার সামনেই একটা বড়সড় খোলা জায়গা, যেখানে কোনো একটা সেমিনার হচ্ছিলো। পেছনদিকে লাইব্রেরী, কি নেই সেখানে! বাংলা, ইংলিশ, আরবি, উর্দু, চাইনিজ, হিন্দি, লাতিন, স্প্যানিশসহ সম্ভবত পৃথিবীর প্রায় সবরকম ভাষার বই এখানে, এক ছাদের নিচে রয়েছে। শুধু বই-ই না বরং অডিও বুকের সিডি কিংবা বাচ্চাদের জন্য এনিমেটেড কার্টুন সিডিরও বিশাল সম্ভার রয়েছে এখানে। উপরের তলার বারান্দা জুড়ে চেয়ার-টেবিল বিছানো, স্টুডেন্টরা সেখানে নিজেদের ক্লাসওয়ার্ক কমপ্লিট করছে, কেউ বা ফ্রি ইন্টারনেটের সুবিধা উপভোগ করছে।

 আবার বয়োজ্যেষ্ঠদেরকে দেখলাম খুব মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়বার কসরত করছে। পত্রিকার জন্য রয়েছে আলাদা জায়গা যেখানে দৈনিক পত্রিকা আর সাময়িকীগুলো রাখা হয়। তৃতীয় তলায় রয়েছে একটি ভাষার স্কুল, যেখানে নবাগত লোকজনদের বিনামূল্যে ইতালিয়ান ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়। বেশ সাজানো গোছানো আর পরিপাটি অভ্যন্তরীণ  জায়গাটা। ঘুরে ঘুরে বই দেখতে লাগলাম, কিন্তু, প্রায় ১২হাজার স্কয়ার ফিটের এই লাইব্রেরী যেনো আর শেষই হয় না। সূর্য কখন মাথার উপর এসে দাঁড়িয়েছে টের-ই পাইনি।

লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে গুগলে সার্চ করে মসজিদ খুঁজে বের করলাম। মিনিট দশেক হেঁটে মসজিদে পৌঁছুলাম। মসজিদটি বেশ ছোটোখাটো তবে পরিপাটি। বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল যে এটা মসজিদ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইউরোপের বেশিরভাগ মসজিদ-ই এরকম। মসজিদ হিসেবে নির্মিত না এগুলো, বরং কোনো গ্যারেজ, বাসা অথবা অ্যাপার্টম্যান্ট ভাড়া করে সেগুলোকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। তাই ভেতরে মসজিদ হলেও বাইরে থেকে সেটা অন্য আর দশটা সাধারণ দোকানের মতোই দেখতে। ঠান্ডা শীতল পানি দিয়ে অজু করে জোহরের নামাজ আদায় করলাম। নামাজান্তে পেটে কিছু দানাপানি চালান করা জরুরী মনে হলো—মসজিদের পাশেই রয়েছে বিরাট এক পাবলিক পার্ক, দুপুরের সময় তাই বেশ নির্জনই ছিলো। পার্কের এক বেঞ্চিতে বসে ব্যাগ থেকে লাঞ্চ প্যাকটা বের করে খোলা আকাশের নিচে ঠান্ডা হিমেল বাতাস গায়ে জড়িয়ে স্যান্ডউইচে কামড় বসাতে বসাতে মৃণাল সেনের সেই লাইন দুটো মনে পড়লো-

পাহাড় দেখেছি, সমুদ্র দেখেছি, তেপান্তর দেখেছি,                                                             কিন্তু এই অদ্ভুত নির্জনতা আগে কোথাও দেখিনি। এক অন্তহীন শূন্যতা।            অথচ চৌকাঠ ডিঙ্গলেই হট্টগোলের শহর। শুধুই হট্টগোল।

***

খাবার শেষ করে বাস টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ালাম, ছোট্ট ট্রেনের মতো তিনটি বগি নিয়ে এই ট্যুরিস্ট বাস। ট্যুরিস্টদের জন্য এই বাসের ব্যবস্থা, শহরের অলিগলি হয়ে পাহাড়ের উপর গিয়ে যাত্রা বিরতি দেয়। তারপর পুনরায় ফিরে আসে আগের জায়গায়। টিকিটের দামও হাতের নাগালেই। ১৫ ইউরো দিয়ে টিকিট নিয়ে চেপে বসলাম লাল রঙের অদ্ভুত এই ট্রেনের মতো দেখতে বাসের ভেতর। একটু একটু করে আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।  পাশের সিট খালি হওয়ায় একটু বাড়তি সুবিধা যে পাচ্ছি না  সেটা বলা বোধহয় উচিত হবে না। কিছুক্ষণ পর বাসটি বিশাল ও প্রাচীন রাজকীয় গেট অতিক্রম করলো, বুঝতে পারলাম শহরের ঐতিহ্যবাহী ৯টি অক্ষত গেটের একটি এটি। ছোটোখাটো একটা দালানের মতো দেখতে এই গেট। সেসময় নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শহরের ধনাঢ্য পরিবারগুলো পুরো শহরের চারপাশে মোটা পুরু ও উঁচু দেয়াল তুলে দেয়। আর সব মিলিয়ে প্রবেশদ্বার তৈরী করে ১২টি। কালের বিবর্তনে দেয়ালগুলো ভেঙে ফেলা হলেও আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ০৯টি প্রবেশদ্বার। এর মধ্যে সবচাইতে সুন্দর গেটটির নাম, porta saragozza দানবাকৃতির এই গেট দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল বড় কোনো দাবার ঘরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দুইজন প্রহরী। আস্তে আস্তে বাস উঠে গেলো পাহাড়ের উপর, পাহাড়ের উপরই রয়েছে শহরের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ গির্জা সান লুকা। বাস থামলে যাত্রীরা সবাই নেমে চারপাশটা ঘুরে দেখতে লাগলো, il portico বা খিলানযুক্ত লম্বা বারান্দা সান লুকার অন্যতম বৈশিষ্ট। তীর্থযাত্রীদেরকে বৃষ্টি থেকে আশ্রয় দিতে ১৬শ সালের শেষের দিকে প্রথমবার এটি তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। প্রায় ৬৬৬টি খিলান সমৃদ্ধ ০৪ কি.মি. দীর্ঘ এই বারান্দা পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ বারান্দা হিসেবে পরিচিত। বিকেলের রোদের আলোয় খিলানের ছায়াগুলো অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিলো। পাহাড়ী ঘাসের উপর গুল-এ-নগমা নিয়ে বসে পড়লাম,

হাম কো ফরিয়াদ করনি আতি হ্যায়  *  আপ শুনতা নেহি তো কেয়া কিযায়!

গালিবের সাথে তার ধ্যানের জগতে হারিয়ে যেতে থাকলাম ক্রমশ। ইতোমধ্যে ডাক এলো, বাস ছেড়ে দিচ্ছে প্রায়। দৌঁড়ে গিয়ে বাসে উঠলাম। সন্ধ্যার নিয়ন বাতিগুলো আস্তে আস্তে জ্বলতে শুরু করেছে। দূরের কোনো কফি শপ থেকে কাপ আর চামচের টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে। বাস ড্রাইভার মনের সুখে বেসুরো গলায় সঙ্গীত গাইছে। যাত্রীরা সারাদিন ঘুরে ঘুরে তোলা ছবিগুলো রি-ওয়াচ দিচ্ছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে দেখলাম মুসলিম প্রো অ্যাপ থেকে পবিত্র মক্কা শরীফের মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসছে মাগরিবের আজান- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *